মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
১. নিজের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন
মন খারাপ লাগলে সেটা অস্বীকার না করে স্বীকার করুন।
"আমি ঠিক নেই" বলাটা দুর্বলতা নয়।
২. ধ্যান ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
প্রতিদিন ১০ মিনিট শান্তভাবে বসে গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন।
এটি স্ট্রেস ও উদ্বেগ অনেক কমায় এবং মনকে শান্ত রাখে।।
৩. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো, যোগ ব্যায়াম বা যেকোনো শরীরচর্চা করলে এন্ডরফিন নামক ‘ভালো লাগার
হরমোন’ নিঃসরণ হয়। মানসিক চাপ ও হতাশা কমে। এতে মন ফুরফুরে থাকে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার।
ঘুমের অভাবে মন খিটখিটে হয় ও বিষণ্নতা বাড়ে।
৫. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
বেশি পানি পান করুন, পুষ্টিকর খাবার যেমন ফল, সবজি, বাদাম, দুধ এগুলো মন ভালো রাখতে সাহায্য
করে। কৃত্রিম চিনি ও অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড মানসিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
৬. সম্পর্ক রক্ষা করুন
কাছের বন্ধু, পরিবার বা যাদের সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগে—তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
একাকীত্ব মানসিক স্বাস্থ্যকে খারাপ করে।একাকীত্ব মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ করে।
৭. অনুভূতির প্রকাশ:
কষ্ট বা দুশ্চিন্তা চেপে না রেখে কারো সঙ্গে শেয়ার করুন, না হয় ডায়েরিতে লিখে ফেলুন।এটা
একধরনের আত্ম-চিকিৎসা।প্রকাশ করা মানসিক ভার কমায়।
৮. Digital Detox (ডিজিটাল বিরতি)
খুব বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে হিংসা, কম্পেয়ার, মানসিক ক্লান্তি আসতে পারে।
মাঝে মাঝে ডিজিটাল ডিটক্স নিন। দিনে কিছু সময় ফোন-সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া থাকুন।
এতে মন বিশ্রাম পায়।
৯. নিজের পছন্দের কাজ করুন
গান শোনা, ছবি আঁকা, গাছের যত্ন নেওয়া—যা ভালো লাগে তাই করুন।
১০. পেশাদার সাহায্য নিন
যদি দীর্ঘদিন ধরে দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা থাকে, তাহলে সাইকোলজিস্ট বা কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া দরকার।
কেন Digital Detox দরকার?
আমরা এখন প্রায় সারাদিন মোবাইলে বা স্ক্রিনে চোখ রাখি। এতে—
মনোযোগ কমে যায়
ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে
মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, হতাশা বাড়ে
বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলো দুর্বল হয়
Digital Detox কীভাবে করা যায়?
১. নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন
দিনে কিছু সময় ঠিক করে নিন (যেমন: রাত ৯টা থেকে সকাল ৮টা) যখন ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন না।
২. নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন
প্রয়োজন না হলে সব অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন।
৩. ফোন ছাড়া সময় কাটানোর উপায় খুঁজুন
বই পড়া, গান শোনা, হাঁটা, পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটানো—এসব করতে পারেন।
৪. Social Media Break
সপ্তাহে ১-২ দিন Facebook/Instagram না খুলে দেখুন, মন কেমন হালকা লাগে!
৫. ডিভাইস ফ্রি জোন তৈরি করুন
বেডরুম বা ডাইনিং টেবিল ফোন-মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
ফলাফল
Digital Detox করলে মন হালকা হয়, ঘুম ভালো হয়, চোখ আর মস্তিষ্ক দুটোই বিশ্রাম পায়। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কিছু সহজ কিন্তু কার্যকরী অভ্যাস গড়ে তুললেই অনেক সুফল পাওয়া যায়। নিচে ধাপে ধাপে বিষয়গুলো বলছি
ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য (Students):
১. পড়াশোনার রুটিন তৈরি করো
পরিকল্পনা ছাড়া চাপ বাড়ে। রুটিনে পড়া ভাগ করে নিলে চাপ কমে।
২. চাপ বা ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলো
পরীক্ষায় খারাপ করলেও সেটা নিয়ে কথা বলো, লুকিয়ে রাখো না।
৩. হালকা ব্যায়াম করো
হাঁটাহাঁটি, খেলাধুলা, বা দৌড় – যেটা পারো সেটাই করো।
৪. বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাও
শুধু অনলাইন না, মাঝে মাঝে রিয়েল লাইফেও আড্ডা দাও।
৫. নিজের প্রতি সদয় হও
ভুল হলে নিজেকে দোষ না দিয়ে শেখার সুযোগ ভাবো।
চাকরিজীবীদের জন্য (Jobholders):
১. কাজ ও ব্যক্তিগত সময় আলাদা করো
"Work-life balance" খুব জরুরি। অফিসের বাইরে কাজ না করলেই ভালো।
২. চাপ কমাতে মেডিটেশন বা Breathing Exercise
দিনে ৫–১০ মিনিট সময় বের করো।
৩. সহকর্মীদের সঙ্গে পজিটিভ সম্পর্ক রাখো
Toxic সম্পর্ক মানসিক চাপ বাড়ায়।
৪. সময় মতো ছুটি নাও
শুধু কাজ নয়, বিশ্রামও দরকার।
৫. একঘণ্টা "No Screen Time" রাখো প্রতিদিন
চোখ, মস্তিষ্ক ও মন—সবই বিশ্রাম পায়।
গৃহিণীদের জন্য (Homemakers):
১. নিজের জন্য "Me Time" রাখো
ঘরের কাজের পাশাপাশি নিজের পছন্দের কাজ করো (গান শোনা, বই পড়া, কিছু তৈরি করা ইত্যাদি)।
২. পরিবারের সবার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলো
নিজের অনুভূতির কথা বললে মন হালকা হয়।
৩. সাহায্য চাইতে দ্বিধা করোনা
সবকিছু একা করতে গেলে চাপ বাড়ে। অন্যদের সাহায্য চাও।
৪. অন্য গৃহিণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ো
মাঝে মাঝে গল্প করা, একসাথে হাঁটা—এইটুকুতেই মন ভালো থাকে।
৫. হালকা ব্যায়াম/যোগব্যায়াম
ঘরেই ১০–১৫ মিনিট সময় বের করে নাও নিজের জন্য।
সাপ্তাহিক মানসিক স্বাস্থ্য রুটিন
ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য:
সোমবার পড়াশোনার রুটিন তৈরি + ১০ মিনিট মেডিটেশন
মঙ্গলবার ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম + ১ ঘণ্টা ফোন ছাড়া সময়
বুধবার বন্ধুদের সঙ্গে ৩০ মিনিট আড্ডা বা গল্প
বৃহস্পতিবার নিজের অনুভূতি ডায়েরিতে লেখা
শুক্রবার প্রিয় কিছু করা (গান, আঁকা, গেম ইত্যাদি)
শনিবার নতুন কিছু শেখা (যেমন: রান্না, স্কিল, বই)
রবিবার ছুটির দিন – পরিবার বা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাও
চাকরিজীবীদের জন্য:
সোমবার অফিস শেষে ১৫ মিনিট হাঁটা + No screen time ৩০ মিনিট
মঙ্গলবার কাজের ফাঁকে ৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে শ্বাস ব্যায়াম
বুধবার সহকর্মীর সঙ্গে ক্যাজুয়াল আড্ডা (চা বা গল্প)
বৃহস্পতিবার নিজেকে সময় দেওয়া: প্রিয় সিরিজ বা বই
শুক্রবার ১ ঘণ্টা পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময়
শনিবার ছোট ছুটি বা নিজে কোথাও বের হওয়া
রবিবার "ডিজিটাল ডিটক্স" দিন: ফোন যত কম, তত ভালো
গৃহিণীদের জন্য:
সোমবার সকালে ১০ মিনিট যোগব্যায়াম + চা হাতে নিজের সময়
মঙ্গলবার পরিবারের কারো সঙ্গে গল্প বা ঘুরে আসা
বুধবার নিজের পছন্দের কিছু রান্না বা তৈরি করা
বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী বা বন্ধু গৃহিণীর সঙ্গে গল্প
শুক্রবার নিজের পরিচর্যা (চুল, ত্বক, সাজ ইত্যাদি)
শনিবার সন্তানের সঙ্গে খোলা মনে সময় কাটানো
রবিবার একেবারে নিজের দিন – গান, সিনেমা, আরাম
প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট নিজের জন্য সময় রাখাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url